top of page

কালী কালী বল রসনা || পার্থ দে || শারদীয়া অন্তরীপ

Writer's picture: Saayan SarkarSaayan Sarkar



বই পড়া ভীষণ জরুরি তার কারণ সাহিত্য আমাদের ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন করতে শেখায় এবং আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে অজানা জিনিস বা ঘটনার প্রতি অনুসন্ধিৎসা।

সুসাহিত্য বা সুসাহিত্যিকরা এমন বিষয় পাঠকদের সামনে তুলে নিয়ে আসতে পারে যা হয়তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চোখের সামনে ঘটছে কিন্তু সেই বিষয় নিয়ে গভীরে ভাবার মানসিকতা আমাদের হয়নি। শারদীয় অন্তরীপ এ প্রকাশিত সুসাহিত্যিক পার্থ দের উপন্যাসটিকে আমি এই ক্যাটাগরিতেই ফেলব।

আর মাত্র মাস খানেকের মধ্যেই কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই পাড়ায় পাড়ায় পুজোমণ্ডপে শ্যামাসংগীত। আমাদের ছোটবেলা থেকেই এক বিশেষ গায়কের শ্যামা সংগীত আমরা শুনে আসছি এবং বছরের পর বছর মুগ্ধ হয়ে আসছি। বাকিদের কথা জানিনা, অন্ততঃ আমি কোনদিন সেই গায়কের জীবন নিয়ে আলাদা করে জানতে চাইনি বা পড়াশোনা করিনি। পার্থবাবুর এই উপন্যাস পড়তে পড়তে গুগল বাবাজীর সাহায্য নিয়েছিলাম সেই গায়কের ব্যাপারে আরো জানতে।সত্যি কথা বলতে গুগল এক্ষেত্রে অন্তত আমাকে হতাশ করেছে এবং এই বিশেষ ব্যক্তিটির জীবন আমার সামনে আরো রহস্যজনক করে তুলেছে। যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে বুঝেছি ভদ্রলোকের জীবনে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন ছিল এবং তার বিখ্যাত গায়ক দাদার সাথে ছিল এক অদ্ভুত রসায়ন।

এতক্ষণে আপনারা বুঝতেই পেরে গেছেন যে উপন্যাসটি এই শ্যামাসংগীত গায়কের জীবনআশ্রয়ী কাল্পনিক উপন্যাস। যেহেতু গায়কের জীবন সম্বন্ধে অনলাইনে বিশেষ কিছু জানা যায় না তাই উপন্যাসের কতটা সত্যি এবং কতটা কল্পনা তা বোঝার উপায় নেই, বোঝার উপায় নেই কারণ লেখকের লেখনীর দুর্দান্ত মুন্সিয়ানা। গায়ক রঙ্গলাল চক্রবর্তী সম্বন্ধে যত পড়বেন ততই বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগের ট্রাজিক হিরোদের কথা মনে পরে যাবে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস এর মতোই রঙ্গলাল চক্রবর্তী কোনদিনই পাঠকপ্রিয় চরিত্র নন, কিন্তু তার জীবনের ট্রাজেডি পড়ে পাঠকদের মন খারাপ লাগবেই। ছোটবেলা থেকেই মায়ের স্নেহে বঞ্চিত, ভীষণ প্রতিভাবান দাদার উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের সামনে ম্লান, এবং জীবনে যেটা পেয়েছেন সেটাতে খুশি না থেকে যা পাননি সেই ব্যর্থতার অন্ধকারে ডুবতে থাকা এক চরিত্র রঙ্গলাল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার নিজস্ব প্রতিভার অপচয় দেখে অথবা যে প্রেম তার জীবনে আসেনি সেই দুঃখে নিজের স্ত্রীর প্রতি বঞ্চনা পড়ে পাঠক হিসেবে কখনো কখনো আমার রাগ হচ্ছিল। একটি চরিত্রের চিত্রায়নে পাঠকদের মনের রাগ বা দুঃখ বের করে আনা খুব সহজ কাজ নয়। আর ঠিক এইখানে লেখক ফুল মার্কস পেয়েছেন।

এক ব্যক্তি যিনি বছরের পর বছর একটি বা দুটি বিশেষ দিনে তার গান শুনিয়ে আপামর বাংলার শ্রোতাদের মাতোয়ারা করে রাখেন, এমন এক ব্যক্তির না জানা চাওয়া পাওয়া এবং দুঃখকে বইয়ের পাতায় এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য লেখক কে আমার আন্তরিক অভিনন্দন এবং ভালোবাসা।

বাংলা সাহিত্যে ভালো কাজ হচ্ছে না বলে যারা আক্ষেপ করেন তাদের এই উপন্যাসটি অবশ্য পাঠ্য।








0 views0 comments

Comentarios


bottom of page