আড়াই হাজার বছর আগে মগধের রাজধানী পাটলিপুত্র থেকে দশ ক্রোশ দূরে, অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গদেশ যেখানে এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে, তারই নিকটবর্তী অরণ্যসংকুল পার্বত্যভূমির বন্ধুরতায় এক বিশাল জলাশয় ঘিরে একটা ছোট্ট গ্রাম লুকিয়ে ছিল। গ্রামের নাম তিন্দারি।...
তিন্দারির পর্বতগাত্রের কোনো সংগোপন অলক্ষিতে সেই পাথরের ফলকটি এখনও পাওয়া যায়নি। তিন্দারি গ্রামেরই আজ আর কোনো অস্তিত্ব নেই। কোথায় ছিল সেই গ্রাম, ইতিহাসের পাতায় নেই তার কোনো প্রত্ননির্দেশ।... অনাবিষ্কৃত সেই মগ্নপাষাণ একদিন হয়ত আবিষ্কৃত হবে। অথবা কোনোদিনও হবে না। সলাজ অবগুণ্ঠনে প্রকৃতিদেবী বোধহয় আবহমানকাল আবৃত করে রাখতে চান সম্রাটের ঐকান্তিক আত্মধিক্কার .....
খ্রিস্টজন্মের দুশো সত্তর বছর আগে মগধের সিংহাসনে অভিষিক্ত হয়েছিলেন বিসার-পুত্র অশোক। ধর্মরাজ্য স্থাপনের সংকল্প নিয়ে মৌর্যসম্রাট প্রিয়দর্শনের সম্রাট অশোক প্রিয়দর্শী হয়ে ওঠার সে অনুপম গাধা ভাস্বর করেছে ইতিহাসের পাতা। কিন্তু সে পৃথক প্রসঙ্গ। অশোক বিন্দুসারের কোনো অখ্যাত রানির পুত্র। মাতৃকুলে ছিল না রাজরক্তের কৌলিন্য। কোনোমতেই তিনি হতে পারেন না পিতার রাজ্যের নৈসর্গিক দাবিদার। সম্রাট বিন্দুসার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী চয়নও করে যাননি। সেক্ষেত্রে সর্বার্থেই তাঁর অগ্রমহিষীর পুত্র সুসীমের সিংহাসনে বসবার কথা। অথচ চার বছর পরে অভিষেক হয়েছে অশোকের। কীভাবে জ্যেষ্ঠভ্রাতা সুসীমকে অতিক্রম করে কনিষ্ঠকুমার সিংহাসনে আসীন হলেন, তা আজ বিস্মৃতির অন্ধকারে। ইতিহাস ঐ চতুর্বর্ষব্যাপী অশান্ত ঘটনাপঞ্জির কোনো বিশ্বস্ত বয়ান সদ্য করে রাখেনি। হিরন্ময় নৈশব্দ্যে মুক হয়ে আছে মহাকালখণ্ডটি। দু- প্রান্ত্রের আলোকিত সূত্রগুলির ঐতিহাসিক গ্রন্থিটি অদৃশ্য এক অপার্থিব অন্ধকারে।
কিন্তু শিলাকীর্ণ অক্ষরগুলি যে আজও রয়ে গেছে। দুই সহস্রাব্দীরও বেশি সময়ের শীত--বৃষ্টি পেরিয়ে সেগুলি পৌঁছে দিয়েছে সুন্দর অতীতের কিছু অকপট বার্তা।
জড় পাথরের মাঝে উন্মোচিত হয় সুদূর অতীতের আলোকিত ইতিহাস। কোনো এক প্রিয়দর্শী রাজার হৃদয়মোক্ষণ করা আত্মোপলব্ধ জীবনদর্শন। এক দিগ্বিজয়ী সম্রাট-কথিত অনাহত শান্তির বাণী। বহু ভ্রাতৃরক্তে হাত রঞ্জিত করে সিংহাসনে আরোহণ এবং কলিঙ্গ যুদ্ধের গণহত্যার শোকে অস্ত্র ত্যাগ।— প্রচলিত ইতিহাস-ভাষ্যের এই দুই বৈপরীত্য মিলবে কীভাবে?
রহস্যাবৃত ঐ চতুর্বর্ষতেই উত্তর রয়েছে সব প্রশ্নের। বর্তমান আখ্যান মূলত ঐ চার বর্ষব্যাপী খণ্ডচিত্রগুলির কাহিনীরূপ। কিছু অনুমান, কিছু কল্পনা। তারই মাঝে এই মহান দ্বিমুখী ব্যক্তিত্বের কারণ অনুসন্ধানে এক গভীরতর রহস্যের উন্মোচন, কলিঙ্গ যুদ্ধ শেষে যা সম্রাটকে করেছে অকল্পনীয় বেদনায় দীর্ণ।
Magnapashan (মগ্নপাষাণ, Bengali, Suryanath Bhattacharya)
Book - Magnapashan
Author - Suryanath Bhattacharya
Binding - Hardcover
Publishing Date - 2021
Publisher - Suprokash Publisher
Edition - 1st
Number of Pages - 370
Language - Bengali