
যে কোন নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল "লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড", অর্থাৎ নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে এবং চলাকালীন সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি যেন একই রকমের সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের আগে আমরা দেখতে পাচ্ছি এক ভয়ংকর দুর্নীতি, যার মাধ্যমে কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন শুরুর আগেই অনেক ক্রোশ এগিয়ে থাকছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির তুলনায়। ভারতবর্ষের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় বেশিরভাগ মিডিয়া চ্যানেলগুলি এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু আমরা চুপ থাকতে পারি না। প্রকাশক হিসেবে এবং তার থেকেও বেশি একটি সচেতন নাগরিক হিসেবে এই ব্যাপারে মুখ খোলা এবং জনসাধারণকে এই ব্যাপারে সজাগ করা আমরা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। সেই ভাবনা থেকে এই বইয়ের প্রকাশ। আমরা আশা করব যে কোন সচেতন বাঙালি পাঠক তাদের ভোটদানের আগে এই বইটি একবার হাতে তুলে নেবেন এবং তাদের যদি মনে হয় এই বই বর্তমান সময়ের একটি জরুরী দলিল তাহলে তাদের আশেপাশের লোকদেরকেও এই বইয়ের ব্যাপারে জানাবেন।
বইয়ের ব্লারব থেকে :
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষ নানা সময় প্রত্যক্ষ করেছে ভিন্ন ভিন্ন ধারার অর্থনৈতিক জালিয়াতির। প্রতিটি ঘোটালার ক্ষেত্রে কখনও নেওয়া হয় চুকলিবাজির আশ্রয়, কখনও-বা ফাঁদ বোনা হয় লোভনীয় স্কীমের মাধ্যমে। তবে, 'ইলেক্টোরাল বন্ড' প্রকল্পে যে চিত্র উঠে আসছে, তা ভিন্ন ও ভয়ঙ্কর। তার পরিধি বিস্তীর্ণ, রাজনৈতিক দলগুলির মজ্জায় মজ্জায়, এমনকি প্রশাসনের অন্দরমহল পর্যন্ত। যদি কখনও ভয় দেখিয়ে উন্নয়নের নামে জোরপূর্বক চাঁদা নেওয়া হয়, নিপুণতার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয় প্রশাসনিক ক্ষমতা, কিংবা, সমঝোতা করা হয় দেশীয় প্রকল্প কিংবা সাধারণ মানুষের প্রাণের সঙ্গে, তবে তা ভয়ানক বৈকি!
গণতন্ত্রে গণ নয়, বরং টাকাই যখন হয়ে ওঠে রাজনৈতিক দলগুলির এক ও একমাত্র চাহিদা, তখন তা দেশ ও দশের শত্রু! গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ, অর্থাৎ মিডিয়ার কর্তব্য এইসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার, উত্তর চাওয়ার। কিন্তু, যখন প্রচলিত সংবাদমাধ্যম এসব বিষয় এড়িয়ে চলে তখন প্রশ্ন করা আমার-আপনার মৌলিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। কারণ,— "হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলানো" নয়, বিরুদ্ধমতই টিকিয়ে রাখে আসল গণতন্ত্র!
গণতন্ত্রে গণই যদি হয় ব্রাত্য,
তবে প্রশ্ন করার অধিকার আমার আপনার সর্বত্র।
প্রচ্ছদ : সুহাঞ্জু দাস এবং Ratnadip Chatterjee
Comments