top of page

—নাম বাজিকর। বাজিকর একটা গোষ্ঠী।
—নিবাস?
—তামাম দুনিয়া।
ঘর নেই বলে দুনিয়া জুড়ে তার নিবাস। ঘর হারাবার পর থেকে তারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছে দিনের পর দিন। কোনো এককালে তারা ছিল গোরখপুরে। ভূমিকম্পে সেখান থেকে উৎখাত হয়ে ঘুরে ঘুরে গিয়েছিল রাজমহল। সেখান থেকে মণিহারিঘাট, হরিশ্চন্দ্রপুর, সামসি হয়ে মালদা। পুবের দিকে তাদের যাত্রা। পূর্বদিকে সূর্য ওঠে, তাদের পূর্বপুরুষ বলেছিল পুবেই যেন থিতু হয় তারা। তাই মালদা হয়ে রাজশাহী, তারপর পাঁচবিবি। সেখানে মার খেয়ে ফের যেতে হয় পশ্চিমের দিকে। তা ঘর তো আরো কারো কারো থাকে না। কিন্তু তাদের গন্তব্য থাকে। ইহুদিরা হাজার হাজার বছর ঘুরে বেড়িয়েছে, কিন্তু তাদের জন্য ছিলো প্রতিশ্রুত দেশ, ঈশ্বর তাদের পছন্দ করেন, পছন্দের বান্দাদের জন্যে তিনি খাস জায়গা রেখে দিয়েছিলেন। তাদের পয়গম্বররা সবাই ঈশ্বরের প্রতিনিধি, পয়গম্বররা জানতো ইহুদিদের ঘর একদিন না একদিন মিলবেই। কিন্তু এই বাজিকরদের কোনো দেশ তাদের জন্যে অপেক্ষা করে না, নিজেদের দেশ তাদের নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হবে।
—বেশ তো, নিবাস ঠিকানাহীন। তবে তাদের ধর্ম কী? কী জাত?
বাজিকর এবার লা-জওয়াব। নিজেদের ধর্ম যে কী, তা তাদের জানা নেই। প্রচলিত ধর্মগুলির কোনোটিকেই তারা সচেতনভাবে গ্রহণ করেনি, আবার ধর্মও তাদের রেহাই দিয়েছে, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেনি। তারা ধার্মিক নয়, আবার এই কারণেই বকধার্মিক হওয়াও তাদের সাধ্যের বাইরে। এতে বাজিকর যে আরামে দিন কাটায় তা নয়, তার কাছে আল্লা ভগবান নামে এমন কোনো পাত্র নেই যার ভেতর তার বিবেচনা, অভিজ্ঞতা সব ঢেলে দিয়ে সে নিশ্চিত হতে পারে।
—তাহলে তার ভাষা কী?
এরকম একটি মূলোৎপাটিত গোষ্ঠীর ভাষার পরিচয় দেওয়া কি সোজা? তার যা আছে তাকে বড়োজোর বুলি বলা যায়। তার যেখানে রাত সেখানে কাত, তেমনি যেখানে যায়, কিছুদিন থাকতে থাকতেই সেখানকার বুলি সে জিভে তুলে নেয়। পায়ের মতো জিভও তার বড়ো পিচ্ছিল, কোনো জায়গার বুলিই তার মুখে ভাষা হওয়ার সময় পায় না, দেখতে না দেখতে বাজিকর চলে যায় অন্য কোথাও, সেখানে গিয়ে সে নতুন বুলি রপ্ত করে।
‘রহু চণ্ডালের হাড়’-এর এই গৃহহীন, ভূমিবঞ্চিত, ধর্মমুক্ত বাজিকর গোষ্ঠী একটি স্থায়ী ঠিকানার খোঁজে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, এক শতাব্দী পেরিয়ে আরেক শতাব্দী জুড়ে এবং গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়, এক নদী পেরিয়ে অন্য নদীর তীরে, পাহাড় পাড়ি দিয়ে আরেক পাহাড়ের উপত্যকায় তাঁবু গাড়ে, জমি পেলে লাঙল চষে, মাঠের জানোয়ার পোষ মানায়, গৃহস্থের পশু হাতাতেও তাদের জুড়ি নেই, সেখানকার বুলি তুলে নেয় মুখে। কিন্তু আসন পেতে বসা তাদের কপালে নেই, অভিশপ্ত পূর্বপুরুষের পাপে (?) তারা ঠিকানাবিহীন মানুষ।

রহুর যে হাড় বাজিকররা হাতে তুলে নিয়েছিলো তারা তাই বাজিয়ে বাজিয়ে সবাইকে ডাক দিয়ে চলেছে। তাদের বহুকাল আগেকার দেশের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পবিত্র নদী ঘর্ঘরার উত্তাল ঢেউ এই বাজনার সঙ্গে সংঘাত করলেও এর আওয়াজ মিঠে নয়। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং পদ্মা, মেঘনা যমুনার মতো ঘর্ঘরাও বিশাল ও প্রাচীন সব তীরভূমি ভেঙে একাকার করে ফেলে। হাড়ের বাজনায় যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাতে ভাঙনের নিশ্চিত আওয়াজ শোনা যায়।
.
.
.
.
রহু চণ্ডালের হাড়
অভিজিৎ সেন

Rohu Chandaler Har || রহু চণ্ডালের হাড়

SKU: 000136
₹295.00 Regular Price
₹236.00Sale Price
  • Book
    • রহু চণ্ডালের হাড়
    Author
    • অভিজিৎ সেন
    Binding
    • Hardcover
    Publishing Date
    • 2024
    Publisher
    • Suprokash Publisher
       
    Language
    • Bengali

Related Products